ইসলামের খলিফা – খিলাফতের ইতিহাস ও খলিফাদের জীবনধারা

ইসলামের খলিফা হলো ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী। একই সাথে খিলাফত হলো খলিফা কর্তৃক পরিচালিত ইসলামিক সরকার ব্যবস্থা। তাই, ইসলামের খলিফাদের জীবনচরিত জানা আমাদের জন্য খুব দরকার।

ইসলামের খলিফাদের জীবন অনুসরণ আমাদের উত্তম চরিত্রবান হতে সহায়তা করবে।

So, কথা না বাডিয়ে ইসলামের খলিফাদের জীবনচরিত সম্পর্কে জেনে নিই।

ইসলামের খলিফা। খলিফাদের ইতিহাস

খুলাফায়ে রাশেদিন। ইসলামের খলিফা

খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে ইসলামের প্রথম ৪ জন খলিফাকে বোঝায়। ইসলামের ৪ জন খলিফা হলেন-

১। হযরত আবু বকর (রা.) 

২। হযরত উমর (রা.)

৩। হযরত উসমান (রা.)

৪। হযরত আলি (রা.)

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ইসলামের প্রথম ২ জন খলিফা- হযরত আবু বকর (রা.) এবং হযরত উমর (রা.) এর জীবনাদর্শ নিয়ে।

 

১। হযরত আবু বকর (রা.) – (ইসলামের প্রথম খলিফা)

 

জন্ম পরিচয়

হযরত আবু বকর (রা.) হলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। তিনি ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম ছিলো আব্দুল্লাহ এবং উপাধি ছিলো সিদ্দিক ও আতিক।

ছোটোবেলা থেকেই তিনি মহানবি (সা.) এর বন্ধু ছিলেন। তিনি বয়ষ্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি সবসময় মহানবি (সা.) এর পাশেই থাকতেন।

দানশীলতা ও সত্যবাদীতা

তিনি আল্লাহর রাস্তায় সব সম্পত্তি দান করে ছিলেন তাঁবুক যুদ্ধের সময়। মহানবি (সা.) এর প্রতি ছিলো তাঁর অগাধ বিশ্বাস। তাই তাঁকে সিদ্দিক অর্থাৎ, মহাসত্যবাদী উপাধি দেওয়া হয়।

মহানবি সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর খলিফা নির্বাচন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর দাফন ও রাসুলের উত্তরাধিকারীর বিষয়ে তাঁর থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা সমাধা হয়।

ফলে মুসলমানগণ এক অবশ্যম্ভাবী বিশৃঙ্খলার হাত থেকে রেহাই পায়। হযরত আবু বকর (রা.) এর শাসন চলাকালীন শাসকদের মধ্যে তিনি ছিলেন আদর্শ।

মহানবি (সা.) এর ইন্তেকাল এর পর মুসলমানদের মধ্যে নানা সমস্যা দেখা দিলে তিনি দৃঢ়তার সাথে তা সমাধান করেন।

আল কুরআন সংরক্ষণ

ইয়ামামার যুদ্ধে আল কুরআনের অনেক হাফেয শাহাদাত বরণ করেন। এতে কুরআন বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিলে তিনি পবিত্র কুরআনকে একত্র করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।

এজন্য তাঁকে ইসলামের ‘ত্রাণকর্তা‘ বলা হয়।

 

খলিফা নির্বাচিত হউয়ার পরও তিনি ব্যাবসা করতেন। নিজ হাতের উপার্জন খেতেন। পরে মুসলমানদের দাবির জন্য কোষাগার থেকে সামান্য ভাতা নিতেন।

মুসলিম জাহানের খলিফা হয়েও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ অনুসরণীয়।

২। হযরত উমর (রা.) – (ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা)

জন্ম ও পরিচয়

 

মুসলিম জাহানের ২য় খলিফা হযরত উমর (রা.)। তিনি ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতার নাম খাত্তাব এবং মাতার নাম হানতামা।

তিনি ছিলেন শিক্ষিত, মার্জিত এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী।

ইসলাম গ্রহণ

 

হযরত উমর (রা.) প্রথম দিকে ইসলামের ঘোর শত্রু ছিলেন। একদা মহানবি (সা.) কে হত্যার জন্য তিনি খোলা তলোয়ার নিয়ে বের হলেন।

পথে শুনলেন, তাঁর বোন ফাতিমা ও ভগ্নিপতি সাঈদ ইসলাম গ্রহণ করেছে।

তিনি তাঁদের হত্যার জন্য তাঁদের বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাঁদের উপর অনেক অত্যাচার করলেন।

কিন্তু তাঁরা প্রাণ দিতে রাজি কিন্তু ইসলাম ত্যাগ করবে না। তাঁদের অবস্থা দেখে তাঁর ভাবন্তর ঘটলো। তিনি মুসলিম হইয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লেন।

তিনি মহানবি (সা.) এর কাছে গিয়ে তাঁর তলোয়ার মহানবির পায়ের সামনে সমার্পণ করলেন।

এভাবে নবুয়তের ৬ষ্ঠ বছরে তাঁর ৩৩ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।

 

ন্যায় বিচারক

 

হযরত উমর ফারুক (রা.) ছিলেন ন্যায় বিচারক। আইনের চোখে তিনি সবাইকে সমানভাবে দেখতেন।

মদ্যপানের কারণে তিনি তাঁর স্বীয় পত্র আবু শাহমাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রমনা।

চরিত্র

 

হযরত উমর ফারুক (রা.) ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে খিলাফত গ্রহণ করার পর তাঁঁর মানবীয় গুণটি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি সত্য ও সত্যের বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন।

তিনি রাষ্ট্রের সকল অধিবাসের খোঁজ খবর রাখার জন্য পুলিশ বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেনাবাহিনীতে সুশৃঙখল রাখার জন্য প্রতি চার মাস পর বাধ্যতামূলক ছুটির ব্যবস্থা করেন।

কৃষিকাজের উন্নয়নে খাল খননের ব্যবস্থা করেন। জনসাধারণের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য তিনি রাতের অন্ধকারে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াতেন হযরত ওমর ফারুক ও মানবতাবোধের মহান আদর্শ।

 

ইসলামের খলিফা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন: ক্লিক

☞☞☞ আজকের আলোচনায় আমরা ইসলামের ২ জন খলিফা সম্পর্কে জানলাম। আমরা চেষ্টা করবো সর্বদা তাঁদের অনুসরণ করতে।

ইসলামের সাথে থাকুন। আল্লাহর ইবাদতে জীবন কাটিয়ে দিন।

শেষকথা:

খুলাফায়ে রাশেদিনের জীবনাদর্শ। ইসলামী জীবনধারা নিয়ে আলোচনা আজকের মতো শেষ করছি।

আমার পরবর্তী কন্টেন্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমার পূর্ববর্তী কন্টেন্ট পড়তে এখানে  ক্লিক  করুন। আসসালামু আলাইকুম।

Leave a Comment